বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কি?

 বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কি?


বাংলাদেশ একটি ছোট কৃষিপ্রধান দেশ। ১,৪৭,৫৭০ বগকিলোমিটার এই দেশটায় হরেক রকমের মানুষ আছে। যাদের রুচিও একেক জনের ভিন্ন। তবে, সরকার একজন। আর সরকারের উপড় ই ন্যস্ত করা আছে জাতীয় কি হবে? খেলা কিংবা অন্যান্য সব কিছু।


বাংলাদেশে ২০২৪ সালে এসে ক্রিকেট টাই জনপ্রিয়। এই কয়েক বছর যাবৎ পুরো দুনিয়ার বুকে ক্রিকেট পাড়া এক অনন্য নাম বয়ে এনেছে।

বাংলাদেশ নারী দলের এশিয়া জয়। বাংলাদেশ U19 পুরুষ দলের World cup জয়। বাংলাদেশ জাতীয় দলের পঞ্জপান্ডব।  (এখানে লিংক দেয়া পঞ্চপান্ডব এর লিখা) 

এদের কারণে পুরো দুনিয়া আজ বাংলাদেশ কে ক্রিকেট চিনে। বড় বড় দেশ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলের সাথে সিরিজ জয়। কিংবা, ওয়ানডে, টি২০ ও টেস্টে জয় করার মাধ্যমে পুরো দুনিয়া ব্যপী সোস্যাল মিডিয়ার কারণে সহজেই এখন বাংলাদেশ কে চিনে।


বাংলাদেশ কে চিনার আরো একটি কারণ আছে। এ দেশের মানুষ কৃষিপ্রধাণ হওয়ার পর ও এরা খেলাপ্রেমী। যখন ফুটবল World cup আসে। তখন এ দেশের মানুষ আরজেন্টনা, ব্রাজিল এদের পতাকা দেশে উড়িয়ে রীতিমতো তাক করে দিয়েছে পুরো পৃথিবীকে। আপাতত, বাংলাদেশ আরজেন্টিনাতে বেশী নাম কুড়িয়েছে। তাদের প্রতি বাংলাদেশের দেশের মানুষ এমন ভালোবাসা দেখিয়েছে যে কারণে, আরজেন্টিনা রীতিমতো বাংলাদেশকে সব সময় বাহবা দেয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলা থাকলে তখন তারা উইস করে।

কিছুদিন আগে ইমি মারটিনেজ আরজেন্টিনা খেলোয়ার বাংলাদেশে এসে ঘুরে গেছে।


তারপর ব্রাজিলের কিংবদয় রোনাদ্রিনহো বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশের খেলোয়ার ও উচ্চ শ্রেনীর মানুষের সাথে ঘুরে ও আড্ডা দিয়ে গেছে।


বাংলাদেশ একটি সুন্দর দেশ। সুন্দর খেলাপ্রেমীর দেশ। আবেগের দেশ। খেলার প্রতি জনগণের ভালোবাসার দেশ।


এ দেশের মানুষ খেলাধুলা কে সত্যি ভালোবাসে। যার ফলে এতো খেলার প্রতি সবাই আকৃষ্ট থাকে। ক্রিকেট কিংবা ফুটবল।

বাংলাদেশে খেলাটি হা-ডু-ডু নামে পরিচিত, যা কাবাডির সাথে ভিন্নতা রয়েছে, যা প্রাচীন কালে ফিরে আসে। হা-ডু-ডু এর কোনও নির্দিষ্ট বিধি নেই এবং বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন বিধি দিয়ে খেলা হয়। কাবাডি হল বাংলাদেশের জাতীয় খেলা, ১৯৭২ সালে অফিসিয়াল স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের অপেশাদার কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়েছিল।






কাবাডি হাজার বছরের বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খেলা হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায় ষোড়শ শতকে। কারও কারও মতে ১৬৩৫ সালের দিকে কাবাডি খেলার জন্ম। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর পাকিস্তানের বাদশাহ ‘গোয়েকর খানে’র তত্ত্বাবধানে এই খেলা রাজকীয় খেলায় পরিণত হয়।

অবশ্য কাবাডি নামটির প্রচলন হয় অনেক পরে। এর আগে খেলাটির নাম ছিল ‘হুসলাটি’। ‘হুস’ অর্থ ধরা পড়া আর ‘লাটি’ হল খেলা। অর্থাৎ ধরা পড়ার খেলা। ১৯৭৩ সালে কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হিসাবে স্বীকৃতি পায়। মৈমনসিংহ গীতিকায়ও এই খেলার কথা উল্লেখ আছে। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় এর বিশেষ চল ছিল বলে জানা যায়। তবে ইতিহাসবিদদের মতে, এই খেলার জন্ম গারো সম্প্রদায়ের মধ্যে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর ‘বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন’ গঠিত হয়। ১৯৭৮ সালে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও বার্মার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতায় প্রথম এশিয়ান কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এভাবে আস্তে আস্তে কাবাডি খেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এরপর থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনপ্রিয় হয়ে উঠে কাবাডি। বিশ্বে বর্তমানে কাবাডির বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।

কাবাডি বিশ্বকাপ

আদর্শ পদ্ধতির কাবাডি বিশ্বকাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশন (আইকেএফ) দ্বারা পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক কাবাডি প্রতিযোগিতা, যাতে জাতীয় পুরুষ ও মহিলা দলগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।

এশিয়ান গেমস

১৯৯০ সাল থেকে এশিয়ান গেমসে কাবাডি খেলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতীয় জাতীয় দল এশিয়ান গেমসের প্রতিটি পুরুষ ও মহিলাদের কাবাডি প্রতিযোগিতা জিতে। ২০১৮ এশিয়ান গেমসে ভারতের বাইরে প্রথম দেশ হিসেবে ইরান কাবাডিতে স্বর্ণ পদক জিতে।

প্রো কাবাডি লীগ

প্রো কাবাডি লিগ ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্থানীয় ব্রডকাস্টার স্টার স্পোর্টসের সমর্থন এবং খেলাধুলার নিয়মাবলী ও উপস্থাপনা পরিবর্তন করে টেলিভিশনের দর্শকদের জন্য আরও উপযুক্ত করতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মতো এই লিগ চালু হয়।

চলুন জেনে নেওয়া যাক এই খেলার নিয়ামাবলী

১. মাঠ: কাবাডি খেলার ছেলেদের মাঠ লম্বায় ১২.৫০ মিটার ও চওড়ায় ১০ মিটার। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে মাঠ লম্বায় ১১ মিটার ও চওড়ায় ৮ মিটার। খেলার মাঠের ঠিক মাঝখানে একটি লাইন টানা থাকে যাকে মধ্যরেখা বা চড়াই লাইন বলে। এই মধ্যরেখার দুই দিকে দুই অর্ধে দুটি লাইন টানা হয় তাকে কোল লাইন বলে। মৃত বা আউট খেলোয়াড়দের জন্য মাঠের দুই পাশে ১ মিটার দূরে দুটি লাইন থাকে যাকে লবি বলা হয়।

২. সদস্য: প্রতি দলে মোট ১২ জন খেলোয়াড় অংশ নেয়। কিন্তু প্রতি দলের ৭ জন খেলোয়াড় একসাথে মাঠে নামে। বাকি ৫ জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে থাকে। খেলা চলাকালীন সর্বাধিক তিনজন খেলোয়াড় পরিবর্তন করা যায়।

৩.সময়: ৫ মিনিট বিরতিসহ দুই অর্ধে পুরুষদের ২৫ মিনিট করে ও মেয়েদের ২০ মিনিট করে খেলা হয়। খেলা শেষে যে দল বেশি পয়েন্ট পায় সেই দলই জয়ী হয়। দুই দলের পয়েন্ট সমান হলে দুই অর্ধে আরও ৫ মিনিট করে খেলা হয়। এরপরও যদি পয়েন্ট সমান থাকে তবে যে দল প্রথম পয়েন্ট অর্জন করেছিল সে দলই জয়ী হয়।

৪. পয়েন্ট: যদি কোনো খেলোয়াড় খেলা চলাকালীন মাঠের বাইরে চলে যায় তাহলে সে আউট হবে। এভাবে একটি দলের সবাই আউট হলে বিপক্ষ দল একটি লোনা (অতিরিক্ত ২ পয়েন্ট) পাবে। মধ্যরেখা থেকে দম নিয়ে বিপক্ষ দলের কোনো খেলোয়াড়কে (একাধিক হতে পারে) স্পর্শ করে এক নিঃশ্বাসে নিরাপদে নিজেদের কোর্টে ফিরে আসতে পারলে যাদেরকে স্পর্শ করবে সে বা তারা সবাই আউট হবে। এভাবে যতজন আউট হবে তাদের প্রত্যেকের জন্য এক পয়েন্ট পাওয়া যাবে।

৫. সতর্কতা: এক নিঃশ্বাসে স্পষ্টভাবে পুনঃপুনঃ কাবাডি বলে ডাক দেওয়াকে ‘দম নেওয়া’ বলে। এই দম মধ্যরেখা থেকে শুরু করতে হবে। বিপক্ষ কোর্টে একসাথে একাধিক আক্রমণকারী যেতে পারবে না। কোনো আক্রমণকারী বিপক্ষ দলের কোর্টে দম হারালে ও বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় তাকে স্পর্শ করতে পারলে সে আক্রমণকারী আউট বলে গণ্য হবে।

আশা করি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কি? তা সম্পর্কে বইঝে গেছেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url